কার্বুরেটর কি? কার্বুরেটরের বিভিন্ন অংশের বর্ননা । Components of carburetor

কার্বুরেটর কি?

কার্বুরেটর এমন একটি যন্ত্র যা একটি সিস্টেমের দাহ্য বায়ু জ্বালানির মিশ্রণ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
একে অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের হৃৎপিণ্ড বলা হয়। এটি শুধুমাত্র পেট্রোল ইঞ্জিনে পাওয়া যায়।
এটি অটোমোবাইল ইঞ্জিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত। 

একটি কার্বুরেটর সাধারণত যে যে  অংশ নিয়ে গঠিত

নিম্নলিখিত অংশগুলি নিয়ে একটি সাধারণ কার্বুরেটর গঠিতঃ
১.থ্রোটল ভাল্ব
২.ভেন্চুরি
৩.স্ট্রেইনার
৪.ফ্লোট চেম্বার
৫.মিক্সিং চেম্বার
৬. মিটারিং ব্যবস্থা
৭.চোক ভাল্ব
৮. নিষ্ক্রিয়করণ ব্যবস্থা
৯.নিষ্ক্রিয় এবং স্থানান্তর পোর্ট 

এই অংশগুলো সম্পর্কে কিছু সহজ তথ্য জেনে নিন 

থ্রোটল ভাল্বঃ এখানে থ্রোটল ভাল্ব প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। জ্বালানি বায়ুর সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। 

ভেন্চুরিঃ ভেন্চুরি হলো এক ধরনের ফাঁকা টিউব যার প্রস্থ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। মূলত চাপ কমাতে সাহায্য করে। 

স্ট্রেইনারঃ এটি ছাঁকনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জ্বালানি থেকে ধূলিকণা অপসারণ করাই এর প্রধান কাজ।

ফ্লোট চেম্বারঃ একে জ্বালানি সংরক্ষণের আধার বলা হয়। ট্যাঙ্ক ফাঁকা থাকলে ভাল্ব খুলে যায় এবং ভর্তি হলে ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়।

মিক্সিং চেম্বারঃ এখানে জ্বালানি এবং বায়ুর মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এরপর সিলিন্ডারে পাঠানো হয়।

মিটারিং ব্যবস্থাঃ এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্গমনের অগ্রভাগ দিয়ে জ্বালানির বের হয়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
চোক ভাল্বঃ প্রধানত,এটি মিক্সিং চেম্বারের ভেতরে বাতাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।শীতকালে ইঞ্জিন চালু না হলে এটি ব্যবহার করা হয়। 

নিষ্ক্রিয়করণ ব্যবস্থাঃ ফ্লোট চেম্বার শুরু করে ভেন্চুরি পর্যন্ত ফাঁকা জায়গাটি নিষ্ক্রিয়করন ব্যবস্থা নামে পরিচিত। এখানে জ্বালানি বায়ুর মিশ্রণকে নিষ্ক্রিয় করা হয়।

নিষ্ক্রিয় এবং স্থানান্তর পোর্টঃ নিষ্ক্রিয় এবং স্থানান্তর পোর্টে ভেন্চুরির নোজল ছাড়াও আরো দুটি নোজল থাকে যা সিলিন্ডারে জ্বালানি সরবরাহ করে।
 

কার্বুরেটরের প্রকারভেদঃ

মিশ্রণ সরবরাহের দিক অনুযায়ী কার্বুরেটরকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাক্রমেঃ
১. আপ ড্রাফট কার্বুরেটর
২.ডাউন ড্রাফট কার্বুরেটর
৩. অনুভূমিক কার্বুরেটর 

সংক্ষেপে কিছু তথ্য দেওয়া হলোঃ

১. আপ ড্রাফট কার্বুরেটরঃ মিক্সিং চেম্বারের নিচ থেকে বাতাস সরবরাহ করা হলে তাকে আপ ড্রাফট কার্বুরেটর বলে।

২.ডাউন ড্রাফট কার্বুরেটরঃ যদি মিক্সিং চেম্বারের উপর থেকে বাতাস সরবরাহ করা হয় তাহলে তাকে ডাউন ড্রাফট কার্বুরেটর বলে।

৩.অনুভূমিক কার্বুরেটরঃ
যদি মিক্সিং চেম্বারের যেকোনো একপাশ থেকে বাতাস সরবরাহ করা হয় তাহলে তাকে অনুভূমিক কার্বুরেটর বলে।.

কার্বুরেটরের কার্যপ্রণালিঃ

এটি ব্রেইনুলি নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। প্রথমত, থ্রোটল ভাল্ব খুলে যায় জ্বালানির সরবরাহ শুরু হয়। এসময় ফ্লোট চেম্বারে গ্যাসোলিনের স্তর ধ্রুব থাকে। ফ্লোট চেম্বার জ্বালানি দিয়ে ভর্তি হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাল্ব বন্ধ হয়ে যায়। বাতাস ভেন্চুরির মাধ্যমে প্রবেশ করার পর দ্রুত বায়ুচাপ সর্বোচ্চ হয়ে যায়। এটা মূলত সাকশন স্ট্রোকের সময় হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে চাপ কমতে থাকে । ফ্লোট চেম্বার এবং ভেন্চুরির মধ্যে চাপের পার্থক্যের কারণে জ্বালানি বায়ুর মিশ্রণ বাতাসে ছেড়ে দেয়।
এটি ডিসচার্জ জেট দ্বারা প্রবাহিত হয়ে নির্দিষ্ট অনুপাতে বায়ু জ্বালানীর মিশ্রণ দিতে সক্ষম। 

কার্বুরেটরের ব্যবহারঃ

১.স্পার্ক ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়।
২.সহজে বায়ু এবং জ্বালানির মিশ্রণ প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়।
৩.যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রনে ব্যবহার করা হয়।
৪.সিলিকন- ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়।
৫. পেট্রোলকে সুক্ষ কণায় রূপান্তর করতে ব্যবহার করা হয়। 

কার্বুরেটরের কিছু সুবিধা

১. ফুয়েল ইনজেকটরের চেয়ে অনেক বেশি সস্তা।
২.অতিরিক্ত বায়ু জ্বালানির মিশ্রণ পাওয়া যায়।
৩. সিলিন্ডার কার্বুরেটরের মাধ্যমে বেশি জ্বালানি টানতে পারে।
৪.সহজে মেরামত করা যায়।।
৫দুই স্ট্রোক এবং চার স্ট্রোক উভয়ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। 

কার্বুরেটরের কিছু অসুবিধা

১ মিশ্রণ সরবরাহের গতি বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত কিছু ব্যবস্থার প্রয়োজন।
২. পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
৩.ফুয়েল ইনজেকটরের চেয়ে ভারী।
৪. কার্বুরেটর চালু রাখতে ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেমের চেয়ে বেশি খরচ লাগে।

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post

Multiplex ads