কম্প্রেসর কি?
কম্প্রেসর এমন ১টি মেকানিক্যাল ডিভাইস, যা গ্যাসের আয়তন কমানোর মাধ্যমে চাপ বৃদ্ধি করে। এর মাধ্যমে উচ্চচাপে বাতাস বা অন্যান্য গ্যাস সরবরাহ করা যায়। কম্প্রেসর বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করা হয়।- পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি এবং রাসায়নিক কেমিক্যাল প্ল্যান্টে,
- বিমানের ক্যাবিন প্রেশারাইজেশনে,
- পানির নিচে বিভিন্ন কাজের জন্য বায়ু সংরক্ষণে,
- চাকায় বাতাস ভরার কাজে,
- গ্যাস টারবাইনে, নিউম্যাটিক যন্ত্রপাতিতে (কম্প্রেসড গ্যাস ব্যাবহার করে চলে এমন যন্ত্রপাতি) ইত্যাদি।
কম্প্রেসর কত প্রকার? প্রত্যেক প্রকারের বর্ণনা, কার্যপদ্ধতি ও ব্যবহার
কম্প্রেসর মূলত ৫ প্রকার:
১.রেসিপ্রকেটিং কম্প্রেসরঃ
কার্যপদ্ধতিঃ এই ধরনের কম্প্রেসরগুলো পিস্টন সিলিন্ডার মেকানিজম ব্যবহার করে গ্যাস কম্প্রেস করে। ১টি মোটর ক্রাঙ্কশ্যাফটকে ঘুরায় এবং ক্রাঙ্কশ্যাফট এই রোটারি মুভমেন্টকে পিস্টনের রেসিপ্রকেটিং মুভমেন্টে রুপান্তর করে। পিস্টনের এই মুভমেন্টের ফলে সিলিন্ডারের ভিতর গ্যাস প্রবেশ করে, কম্প্রেস হয় এবং বের হয়ে যায়। প্রত্যেকটা সিলিন্ডারে ১টি সাকশন ভাল্ভ এবং ১টি ডিসচার্জ ভাল্ভ থাকে।রেসিপ্রকেটিং কম্প্রেসর ৩ ধরনের হয়
⇒ ওপেনঃ এই ধরনের কম্প্রেসরের শ্যাফট কেসিং এর বাইরে থাকে। এদের ইলেকট্রিক মোটর ছাড়াও টারবাইন, আই সি ইঞ্জিন ইত্যাদির সাহায্যে চালানো যায়।
⇒ সেমি হারমেটিকঃ এদের কম্প্রেসর এবং মোটর একই কেসিং এর মধ্যে থাকে। মোটর এবং কম্প্রেসর এর শ্যাফটও একই। এদের কেসিং ইন্সপেকশন অথবা মেইনটেন্যান্স এর জন্য সহজেই খোলা যায়।
⇒ হারমেটিকঃ এই ধরনের কম্প্রেসরের কেসিং ওয়েল্ডিং এর মাধ্যমে সীল করা থাকে। ইন্সপেকশন অথবা মেইনটেন্যান্স করতে হলে কেসিং কেটে তারপর করতে হয়।
(২) ডাবল অ্যাক্টিং কম্প্রেসরঃ গ্যাসের সাকশন, কম্প্রেশন এবং এক্সিট সিলিন্ডারের উভয় দিকে হয়।
(৩) ডায়াফ্রাম কম্প্রেসরঃ সাধারণত হাইড্রোজেন এবং প্রাকৃতিক গ্যাস কম্প্রেস করতে এদের ব্যবহার করা হয়।
সুবিধাঃ
ইন্সটলেশন খরচ কম, বিভিন্ন ধরনের গ্যাস কম্প্রেস করা যায়, ব্রড ক্যাপাসিটি রেঞ্জ (১.৮ থেকে ৩৫০ কিলো ওয়াট)।
অসুবিধাঃ
কর্মদক্ষতা কম, ভাইব্রেশন বেশি, মেইনটেইন করা কষ্টকর।
ব্যবহারঃ
বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ার কন্ডিশনে এই কম্প্রেসর ব্যবহার করা হয়।
২.রোটারি ভেন কম্প্রেসরঃ
কার্যপদ্ধতিঃ এই ধরনের কম্প্রেসরগুলোতে ১টি সিলিন্ডার আকৃতির চেম্বার এর ১দিক এ ১টি ইনলেট পোর্ট ও অন্যদিকে ১টি আউটলেট পোর্ট থাকে। সিলিন্ডারের ভিতর ১টি অফসেন্টার ড্রাইভ শ্যাফটে স্লাইডিং প্লেট বা ভেনগুলো যুক্ত থাকে। ইনলেট পোর্ট দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডারে প্রবেশ করে, ড্রাইভ শ্যাফটের ঘূর্ণনের ফলে ভেনগুলো অবস্থান পরিবর্তন করে, যার ফলে চেম্বার এর আয়তন হ্রাস পায় এবং গ্যাস সংকুচিত হয়ে গ্যাসের চাপ বেড়ে যায়। এই উচ্চচাপের গ্যাস আউটলেট পোর্ট দিয়ে বের হয়ে যায়।
সুবিধাঃ
ভাইব্রেশন কম, ওজন ও আয়তন একই ক্যাপাসিটির অন্যান্য কম্প্রেসর অপেক্ষা কম ।
অসুবিধাঃ
ক্যাপাসিটি কম (১৮ কিলো ওয়াট পর্যন্ত)
ব্যবহারঃ
বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ার কন্ডিশনে এই কম্প্রেসর ব্যাবহার করা হয়।
৩.স্ক্রল কম্প্রেসরঃ
কার্যপদ্ধতিঃ এই ধরনের কম্প্রেসরে ২টি স্ক্রল থাকে। ১টি স্ক্রল স্থির থাকে এবং অপরটি ঘুরতে থাকে। এই বিশেষ মুভমেন্ট এর ফলে স্ক্রল কম্প্রেসর এর মধ্যে এয়ার পকেট তৈরি হয় এবং প্রতিটি এয়ার পকেটের আয়তন ক্রমশ কমতে থাকে। ইনলেট পোর্ট দিয়ে গ্যাস ১টি এয়ার পকেটে প্রবেশ করে। ঘূর্ণনশীল স্ক্রল এর ঘূর্ণনের ফলে এয়ার পকেটের আয়তন ছোট হতে থাকে এবং তাতে আবদ্ধ গ্যাস এর আয়তনও কমে, চাপ বাড়তে থাকে। ১ পর্যায়ে আউটলেট দিয়ে উচ্চচাপের গ্যাস বের হয়ে যায়।সুবিধাঃ
ওজন ও আয়তন একই ক্যাপাসিটির রেসিপ্রকেটিং কম্প্রেসর অপেক্ষা কম, ভাইব্রেশন কম, শব্দ দূষণ কম করে।
অসুবিধাঃ
ওজন ও আয়তন একই ক্যাপাসিটির ভেন কম্প্রেসর অপেক্ষা বেশি।
ব্যাবহারঃ
হিট পাম্প, এয়ার কন্ডিশন, যানবাহনে (গাড়িতে সুপারচারজার হিসাবে) ব্যবহার করা হয়।
৪.স্ক্রু কম্প্রেসরঃকম্প্রেসর কি
কার্যপদ্ধতিঃ এই ধরনের কম্প্রেসরে ২টি ইন্টারলকিং স্ক্রু থাকে, এদের রোটর বলে। ১টি মেল রোটর এবং অপরটি ফিমেল রোটর। মেল রোটরটি পাওয়ার সাপ্লাই এর সাথে যুক্ত থাকে। ফলে ২টি রোটর ই ঘুরতে থাকে। ইনলেট পোর্ট দিয়ে গ্যাস এসে রোটর এর মধ্যবর্তী চেম্বারে প্রবেশ করে এবং স্ক্রুর ঘূর্ণনের সাথে আউটলেট পোর্ট এর দিকে জেতে থাকে। এসময় আয়তন হ্রাস পেয়ে গ্যাস এর চাপ বাড়তে থাকে এবং আউটলেট পোর্ট দিয়ে উচ্চচাপে গ্যাস বের হয়।সুবিধাঃ ওজন ও আয়তন একই ক্যাপাসিটির অন্যান্য কম্প্রেসর অপেক্ষা কম, ভাইব্রেশন কম, কর্মদক্ষতা বেশি।
অসুবিধাঃ
৭০ কিলো ওয়াটের কম ক্যাপাসিটির হয় না।
ব্যাবহারঃ
৭০ থেকে ২৬৩৭ কিলো ওয়াটের এয়ার কন্ডিশন ও রিফ্রিজারেশন সিসটেমে ব্যবহার করা হয়।
৫.সেন্ট্রিফিউগাল কম্প্রেসরঃ
কার্যপদ্ধতিঃ এই ধরনের কম্প্রেসরে কাস্ট আয়রনের কেসিং এবং কাস্ট অ্যালুমিনিয়ামের ইম্পেলার থাকে। মোটরের সাহায্যে ইম্পেলারকে ঘুরানো হয়। ফলে ইনলেট পোর্ট থেকে গ্যাস ইম্পেলারের সেন্টার বরাবর আসে এবং সেখান থেকে সেন্ট্রিফিউগাল ফোরস এর কারণে ইম্পেলারের বাইরের প্রান্তে চলে যায়। এসময় গ্যাস এর বেগ অনেক বেশি থাকে, কিন্তু চাপ কম থাকে। এরপর গ্যাস ডিফিউসারে প্রবেশ করে। এখানে উচ্চ গতি ও নিম্ন চাপের গ্যাস, ধীর গতির উচ্চ চাপের গ্যাসে রুপান্তরিত হয়। ডিফিউসার থেকে বের হয়ে উচ্চ চাপের গ্যাস কেসিং এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আউটলেট বা ডিসচার্জ পোর্ট দিয়ে বের হয়ে যায়।সুবিধাঃ ক্যাপাসিটি সব থেকে বেশি (৩৫,০০০ কিলো ওয়াট পর্যন্ত), ভাইব্রেশন কম, মেইনটেন্যান্স খরচ কম।
অসুবিধাঃ
কর্মদক্ষতা স্ক্রু কম্প্রেসরের তুলনায় কম, কমপ্রেশন রেশিও তুলনামূলক কম।
ব্যাবহারঃ সাধারণত চিলারে ব্যাবহার করা হয়।
Post a Comment